December 26, 2024, 4:08 pm

অভাবে ছিনতাই করতে উত্তরা যায় ঋণগ্রস্ত সামাদ।

অনলাইন ডেক্স
  • Update Time : Monday, August 15, 2022,
  • 36 Time View

কোনো কাজ নেই, সংসার চালাতে মুশকিল, সেসঙ্গে এলাকায় অনেকটা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে আবদুস সামাদ (৩৮)। কোনো উপায় না পেয়ে ছিনতাই করার সিদ্ধান্ত নেয় সামাদ। এরজন্য প্রথমে সামাদ একটি ছুরি সংগ্রহ করে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে বসুমতি পরিবহনে চেপে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং গিয়ে নামেন আবদুস সামাদ। এরপর বিভিন্ন বুথের সামনে ঘুরে ঘুরে সামাদ ছিনতাইয়ের সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

 

এটিএম বুথে যখন ব্যবসায়ী শরীফ উল্লাহ টাকা তুললে প্রবেশ করেন। ঠিক তখনই শরীফের হাত থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতে প্রথমেই তার ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে ঘাতক সামাদ। তার উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত হয়ে প্রাণ হারান বুথে টাকা তুলতে যাওয়া গ্রাহক শরীফ। গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এ তথ্য জানিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ছিনতাইকারী সামাদ।

নেত্রকোনার পূর্বধলার বিশকাকলী এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে সামাদ। গাজীপুরের পুবাইলের বসুগাঁও গ্রামে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকত ওই ঘাতক। তার একটি সন্তান প্রতিবন্ধী। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সড়কের দুই নম্বর বাড়ির নিচে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ। সেখানে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন শাফিয়ার রহমান।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার বুথের সামনে এসে থামে। ব্যবসায়ী শরীফ উল্লাহ ওই গাড়ি থেকে নামেন এবং বন্ধুদের বিদায় দিয়ে এটিএম বুথে ঢোকেন। বুথের দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড শাফিয়ার বুথের গেটে ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই রিকশা থেকে নেমে এক ব্যক্তি (সামাদ) হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন বুথে ঢুকতে। সিকিউরিটি গার্ড বাধা দিলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ওই যুবক বুথের ভেতরে ঢুকে যায়। এরপর শরীফের ঘাড়ে ছুরি ধরেন এবং টাকা চান। তাদের মধ্যে চলে ধস্তাধস্তি। তা দেখে সিকিউরিটি গার্ড বুথের পাশে সেক্টরের সিকিউরিটিদের ডাকে যায়। দ্রুত তারা এসে দেখেন বুথের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে শরীফ ছটফট করছেন। আর ওই যুবক বুথ থেকে বের হয়ে পাশের একটি খুঁটির নিচে রক্তাক্ত ছুরি ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। ঘটনার পর ঘাতক আবদুস সামাদকে সেক্টরের সিকিউরিটি গার্ড ও জনগণ ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় ব্যবসায়ী শরীফের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় হত্যা ও ছিনতাই চেষ্টার একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় সামাদকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় সামাদ হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন।

পুলিশ আরও জানায়, তদন্তে সামাদের আগে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড পায়নি। মূলত সে পেশাদার ছিনতাইকারী নয়।

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা আট হাজার টাকা ও একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে। ছিনতাইকারী কোনো টাকা নিতে পারেননি।

গ্রেফতার ছিনতাইকারী আবদুস সামাদ ঘটনার বিষয়ে শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। ওই জবানবন্দীতে সে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। সে আদালতের কাছে বলেছে, আর্থিক অভাব-অনটনে পড়ে সে ছিনতাই করতে যায়।

নিহত শরীফ উল্লাহ তার স্ত্রীর রিয়ানা পারভীন পলি ও তার দুই ছেলে শাহ নেওয়াজ স্বাধীন (১২) ও সোয়েব মাহমুদকে (৫) নিয়ে টঙ্গীর দেওড়া ১৮৯ শাহজালাল রোডের একটি বাসায় থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার মধুপুর গ্রামে।

উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের রোড ৬/সির ২৪ নম্বর প্লটের জাকিয়া টাইলস গ্যালারি অ্যান্ড স্যানিটারি নামে টাইলসের দোকান পরিচালনা করতেন ব্যবসায়ী শরীফ। আগের টঙ্গীর দেওড়া এলাকায় তার টাইলসের দোকান ছিল তার।

নিহত শরীফের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন, বুথে টাকা উত্তোলন করার সময় ছিনতাইকারী তাকে ধরেছে। কিন্তু টাকা তো নেয়নি। ছুরিকাঘাত করে পালানোর সময় ধরা পড়েছে। ছিনতাইকারীরা সাধারণত পেটে হাতে আঘাত করে কিন্তু ঘাড়ে আঘাত করার উদ্দেশ্য স্পস্ট বোঝায় যে, গ্রেফতার ব্যক্তি তাকে হত্যা করতেই এসেছিল।

এছাড়াও ওই রাতে তাকে যে গাড়িটি বুথের সামনে নামিয়ে দেয়, ওই গাড়িতেও তার দুই বন্ধু ছিলেন। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানা পুলিশকে বলেছিলাম। কিন্তু পুলিশ তা করেনি। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের পরিবার ও সন্তানরা এতিম হয়ে গেল। সামান্য কিছু টাকার জন্য মানুষের জীবনের কী কোনো মূল্য নেই? এখন তাদের দেখবে কে?

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71